অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য বিষয়টি এইচএসসি “ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্র” এর ৪র্থ অধ্যায় এর পাঠ।
অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
একাধিক ব্যক্তি নিজেদের পুঁজি ও সামর্থ্য একত্র করে চুক্তির ভিত্তিতে যে ব্যবসায় গড়ে তোলে, তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে যৌথভাবে পরিচালিত ব্যবসায়ে লিপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের 4 ধারায় বলা হয়েছে,
সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যকার সম্পর্ককে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
উপরিউক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে অংশীদারি ব্যবসায় সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায় তা হলো:
১. অংশীদারি ব্যবসায় হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যকার চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক।
২. দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুনাফার লক্ষ্যে এ ব্যবসায় গঠন করে।
৩. অংশীদারদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক থাকতে হবে।
৪. অংশীদাররা একে অন্যের প্রতিনিধি।
৫. এতে বেশি পুঁজি ও দক্ষতার সমাবেশ হয় প্রভৃতি।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
একমালিকানা ব্যবসায়ের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য অংশীদারি ব্যবসায়ের উদ্ভব হয়েছে। এমন কিছু বৈশিষ্ট্য অংশীদারি ব্যবসায়ে বিদ্যমান, যা এরূপ ব্যবসায়কে অন্যান্য ব্যবসায় থেকে পৃথক করেছে।
১. সদস্য সংখ্যা ও যোগ্যতা (Number of members and capabilities): অংশীদারি ব্যবসায় কমপক্ষে দুইজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। সাধারণ অংশীদারির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিশজন জন এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়ে সর্বোচ্চ সদস্য দশজন থাকতে পারে। তবে সবাইকে চুক্তি সম্পাদনে যোগ্য অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হয়।
২. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক (Contractual relation): চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের আলোকেই অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ীই ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়। আইনে বলা হয়েছে , অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি থেকে উদ্ভূত, কোনো পদমর্যাদা থেকে নয়। এ চুক্তি হতে পারে মৌখিক, লিখিত বা লিখিত ও নিবন্ধিত। তবে, ব্যবসায়ে কোনো অংশীদারের দায় সীমিত থাকলে উক্ত ব্যবসায়কে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে।
৩. অসীম দায় (Unlimited liability): অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্যদের দায় অসীম। অর্থাৎ, যে দায় আগে থেকে অনির্ধারিত বা সীমাহীন। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক দায়ের জন্য অংশীদারদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও দায়বন্ধ হতে পারে। আইন অনুযায়ী তারা ব্যক্তিগতভাবে ও যৌথভাবে ব্যবসায়িক সব দায়-দেনার জন্য দায়ী থাকবেন। দায় পরিশোধে কেউ অক্ষম বা দেউলিয়া হলে , অন্য সদস্যদের ওপর তা বর্তায়।
৪. আস্থা ও বিশ্বাস (Trust and faith): পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে এ ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব ও সফলতার জন্য এরূপ আস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। অংশীদারদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা দিলে ব্যবসায়ের সাফল্যের পরিবর্তে বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দেয়।
৫. মূলধন সরবরাহ (Supply of capital): অংশীদারি ব্যবসায়ে সমান পরিমাণে বা চুক্তি অনুযায়ী অংশীদাররা মূলধন সরবরাহ করেন। তবে অংশীদারদের সম্মতিক্রমে কোনো ব্যক্তি অর্থ সরবরাহ না করেও এ ব্যবসায়ের অংশীদার হতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি সুনাম, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা প্রভৃতি মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করেন।
৬. লাভ-লোকসান বন্টন (Distribution of profit and loss): ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান চুক্তি অনুযায়ী অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা হয় । চুক্তিতে এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ না থাকলে অংশীদাররা তা সমানভাবে ভাগ করে নেন।
৭. গঠন ও পরিচালনা (Formation and operating): আইনসম্মতভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় চুক্তিবন্ধ হয়ে এ ব্যবসায় গঠন করতে পারেন। সিটি কর্পোরেশন বা পৌর এলাকায় ব্যবসায় পরিচালনার জন্য সরকারি নিয়মানুসারে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় । এ ব্যবসায় সব অংশীদার বা সবার পক্ষে একজন ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। তবে, সীমিত দায়সম্পন্ন অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায় অংশ নিতে পারে না।
৮. আইনগত সভার অনুপস্থিতি (Absence of legal entity): অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত হোক বা না হোক, তাতে এর কোনো আইনগত সত্তার সৃষ্টি হয় না। ফলে, ব্যবসায় নিজস্ব নামে পরিচিত ও পরিচালিত হতে পারে না। এটি অংশীদারদের নামেই পরিচিত ও পরিচালিত হয়। আইনগত সভার অভাবে এরূপ ব্যবসায়ের নামে মামলা করা যায় না এবং স্থায়িত্ব অনিশ্চিত হয়।
৯. প্রতিনিধিত্বের সুযোগ (Opportunity to represent): এরূপ ব্যবসায়ে প্রত্যেক অংশীদার একে অপরের প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হন। ফলে যেকোনো অংশীদার অন্য অংশীদারের পক্ষে কাজ পরিচালনা করতে পারেন। এতে ব্যবসায়িক কাজ কোন প্রকার বাধা ছাড়াই চলতে পারে।
১০. বিলোপসাধন (Dissolution): অংশীদারি ব্যবসায়ের পৃথক আইনগত সত্তা না থাকায় এর বিলোপসাধন বা স্থায়িত্বের বিষয়টি অংশীদারদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তাছাড়া, কোনো অংশীদারের মৃত্যু, পাগল বা দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, স্থায়ী অক্ষমতা প্রভৃতি কারণেও এরূপ ব্যবসায়ের বিলোপসাধন হয়ে থাকে।
সুতরাং বলা যায়, অংশীদারি ব্যবসায় হলো চুক্তির ভিত্তিতে গঠিত কিছু লোকের সংগঠন। ওপরের বৈশিষ্ট্যের কারণে এ ব্যবসায়কে অন্যান্য ব্যবসায় সংগঠন থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র বলে বিবেচনা করা হয়।
অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য ঃ
আরও পড়ূনঃ