অংশীদারি ব্যবাসায়ের গঠন ক্লাসটি “এইচএসসি (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) – ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র [HSC (Class 11-12) – Business Organization and Management 1st Paper]” বিষয়ের, ৪র্থ অধ্যায়ের [Chapter 4] পাঠ।
Table of Contents
অংশীদারি ব্যবাসায়ের গঠন
চুক্তির মাধ্যমে দুই বা তার বেশি সংখ্যাক মানুষ যখন মুনাফা লাভের আশায়, বৈধভাবে চুক্তি বদ্ধ হয়ে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে তাকে অংশীদারি ব্যবসা বলে। অংশীদারি ব্যবসার নিয়ম অনুসারে, একটি অংশীদারি কারবারে কম পক্ষে দুইজন ব্যক্তি ও সবথেকে বেশি কুড়ি (২০) জন ব্যাক্তি অংশীদার থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশ অংশীদারি ব্যবসা আইন ১৯৩২ অনুসারে এই মালিকানা আইনিভাবে স্বীকৃত করা হয়। এই আইন অনুসারে একজন ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত একটি ব্যবসা থেকে যখন অনেক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অবস্থায় মুনাফা লাভ করে, তখন সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক তৈরি হয়।
অংশীদারি ব্যবসার মূল ভিত্তি কি?
প্রত্যেক অংশীদারি ব্যবসার মূল ভিত্তি হলো চুক্তি। অংশীদার ব্যক্তিগণের মধ্যকার চুক্তির বিষয়বস্তু যে দলিলে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে অংশীদারী চুক্তিপত্র বলে। এই চুক্তিপত্রে অংশীদারি ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। এই চুক্তিপত্র এমন ভাবে নির্ধারণ করা উচিত যেন ভবিষ্যতে সকল সমস্যার সমাধান করা যায়।
অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি লিখিত, নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত ও মৌখিক হতে পারে। তাই বলা হয় অংশীদারদের মধ্যে চুক্তি তাদের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। কারণ তাদের চুক্তি অনুযায়ী মূলধন বিনিয়োগ, পরিচালনার, লাভ লকসান বন্টন করা হয়। তাই চুক্তিই প্রত্যেক অংশীদারদের মধ্যে দায় ও অধিকার নিশ্চিত করে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
এই ধরনের ব্যবসায় অনেক গুলো বৈশিষ্ট্য থাকে, যার মধ্যে ব্যবসাকে এক মালিকানাধীন বা যৌথ মালিকানাধীন ব্যবসাকে পৃথক করে।
অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য গুলো হল –
(১) একের বেশি সদস্য সংখ্যা
এই ব্যবসায়ে সব সময় একের বেশি অংশীদারি থাকা জরুরি। যেহেতু ব্যবসার প্রধান সূত্র হলো অংশীদারিত্ব, তাই এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ জন বা তার বেশি অংশীদারিত্ব থাকতে হবে।
(২) সদস্য সংখ্যার সীমাবদ্ধতা
এই ব্যবসায় সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন নিয়ে অংশীদারি ব্যবসা করে ওঠে। সদস্যসংখ্যা এর বেশি বা কম হলে সেটা অংশীদারি কারবার হিসাবে স্বীকৃতি পাবে না।
(৩) চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক
মনে রাখবেন, চুক্তি হলো অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। যদি ওর অংশীদারিদের মধ্যে চুক্তি না থাকে, তাহলে এই ব্যবসায় কোন অস্তিত্ব থাকে না। তাই এই ব্যবসায় বেশ কয়েক ধরনের চুক্তি দেখা যায়। যেমন – লিখিত চুক্তি, মৌখিক চুক্তি, লিখিত ও মৌখিক উভয় চুক্তি।
(৪) মূলধন সরবরাহ
ব্যবসাতে অংশীদারগণ তাদের চুক্তি অনুযায়ী মূলধন সরবরাহ করে। যদি চুক্তি পত্রে উল্লেখ থাকে তাহলে মূলধন ছাড়াও ব্যবসায় অংশীদার হওয়া যায়। যেমন – নামমাত্র অংশীদার।
(৫) ব্যবসা পরিচালনায় অংশগ্রহণ
প্রত্যেক অংশীদারগণ ব্যবসা পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে, সকল অংশীদারিদের পক্ষ থেকে একজন অংশীদার ব্যবসা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন।
(৬) পারস্পরিক বিশ্বাস অর্জন
অংশীদারদের পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস হলো অংশীদারি ব্যবসা অন্যতম বিশেষত্ব। অংশীদারি ব্যবসায়ের সফলতা নির্ভর করে একে অপরের নির্ভরশীলতা ও বিশ্বাসের উপর।
(৭) মুনাফা বন্টন প্রক্রিয়া
প্রত্যেক অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সকল অংশীদারগণের মধ্যে সমান ভাবে মুনাফা বন্টন করা হয়। তবে, চুক্তিপত্রে যদি নিদিষ্ট কিছু বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয় তাহলে সেই চুক্তি অনুযায়ী মুনাফা বন্টন করা হবে।
(৮) আইনগত সত্তা
সাধারণত অংশীদারি ব্যবসায়ী নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দুইটি ভাবে হয়ে থাকে। যদি ব্যবসার নিবন্ধন থাকে তাহলে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। ব্যবসা নিবন্ধন করা থাকলেও কোনো ধরনের আইনগত সত্তা তৈরি হয় না। তাই এই ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসায় অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
(৯) অংশীদারি ব্যবসা খারিজ
কোন কারণে কারবারি অংশীদারদের মধ্য অবিশ্বাস, বিবাদ-বচসা তৈরি হয়, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবসার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
(১০) দায়
মনে রাখবেন, অংশীদারি ব্যবসায়ের দায় অসীম। তাই এই ব্যবসায়ের যে কোনো পরিমান দায়ের জন্য সকল অংশীদাররা নিজে ব্যাক্তিগত এবং সমষ্টিগত ভাবে দায়বদ্ধতা থাকে।
অংশীদারি ব্যবাসায়ের গঠন এর বিষয়বস্তুঃ
আরও পড়ূনঃ