আজকের আলোচনার বিযয় নেতৃত্বের তত্ত্ব ও ধরনের সাথে প্রেষণার সম্পর্ক – যা নেতৃত্ব এর অর্ন্তভুক্ত, কোনো দল বা গোষ্ঠীর আচরণ ও কাজকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে নেয়ার কৌশল বা প্রচেষ্টাকেই নেতৃত্ব বলে । যোগ্য নেতৃত্ব কীভাবে সৃষ্ট হয় এ সম্পর্কীত মনিষীদের মতকেই নেতৃত্ব তত্ত্ব বলা হয় ।
সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহে যে বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব লক্ষণীয় তার স্বকীয়তার ভিত্তিতেই নেতৃত্বের বিভিন্ন ধরন গড়ে উঠেছে। নির্দেশনা, প্রেষণা, যোগাযোগ, সমন্বয় সবই নেতৃত্ব প্রক্রিয়ার অধীন। নির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনে জনশক্তিকে শুধুমাত্র আদেশ দিলেই চলে না, এজন্য যোগ্য নেতা অধস্তনদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করে কাজ আদায়ে সচেষ্ট হন। তাই নেতৃত্ব তত্ত্ব ও ধরনে প্রেষণার বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Table of Contents
নেতৃত্বের তত্ত্ব ও ধরনের সাথে প্রেষণার সম্পর্ক
নেতৃত্বের সাথে দু’টি পক্ষ জড়িত: ক) নেতা অর্থাৎ যিনি নেতৃত্ব দেন ও খ) অধস্তন অর্থাৎ যারা নেতা কর্তৃক পরিচালিত হয় । যেই নেতা প্রেষণাদানের মাধ্যমে জনশক্তিকে লক্ষ্যপানে পরিচালনা করেন তিনিই যোগ্য নেতা হিসেবে স্বীকৃত । তার অধীন জনশক্তি নেতার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন এবং তার নির্দেশ পালনে উৎসাহবোধ করেন ।
অন্যদিকে যেই নেতা প্রেষণা দানের বিষয়ে উদাসীন তার প্রতি অধস্তনরা অসন্তুষ্ট থাকে । ফলে এরূপ নেতৃত্ব ভয়- ভীতি প্রদর্শন করে কাজ আদায়ের চেষ্টা করে। তাই প্রেষণা দানের বিচারে পরবর্তী ধরনের নেতৃত্ব (স্বৈরচারী নেতৃত্ব) আলোচনার মধ্যে আসে না। প্রেষণা দানের দৃষ্টিকোণ থেকে নেতৃত্বের বিভিন্ন ধরন নিম্নে আলোচনা করা হলো:

ক) কর্মীকেন্দ্ৰীক নেতৃত্ব (Employee-oriented leadership) :
উৎপাদন বৃদ্ধিতে কর্মীদের ভাল-মন্দ বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে যে নেতৃত্ব কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে কর্মীকেন্দ্রীক নেতৃত্ব বলে । এরূপ নেতৃত্ব ধারণায় নেতা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে কর্মীদের নিকট থেকে উত্তম সহায়তা লাভের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করে । কর্মকেন্দ্রীক নেতৃত্ব ধারণা অপেক্ষা এরূপ ধারণা আধুনিক বিবেচিত হয়ে থাকে ।
খ) অংশগ্রহণমূলক বা গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Participative or democratic leadership) :
এরূপ নেতৃত্ব স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের বিপরীত। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সমগ্র ক্ষমতা নিজের কাছে কেন্দ্রীভূত না রেখে নেতা প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব অধস্তনদের কাছে হস্তান্তর করে। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অধস্তনদের পরামর্শ গ্রহণ ও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় এরূপ নেতৃত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে । এরূপ নেতৃত্বের অধীনে কর্মীদের মনোবল, নৈতিকতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । তবে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক সময় বিলম্ব হয় এবং অধস্তনদের সবাইকে সব সময় খুশী করা যায় না ।
গ) রূপান্তরমূলক নেতৃত্ব (Transformational leadership) :
রূপান্তরমূলক নেতৃত্ব আদান-প্রদানমূলক 221 CT নেতৃত্ব অপেক্ষা অগ্রসর মানের। এক্ষেত্রে নেতা শুধুমাত্র অধস্তনদেরকে উৎসাহিতই করে না এর বাইরেও তাদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা ও আগ্রহ জন্ম দেয়। এ ছাড়াও অধস্তনদের মধ্যে এমন বোধের সৃষ্টি হয় যে, তারা প্রতিষ্ঠানের মিশন বা লক্ষ্যকে নিজের মিশন বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে । ফলে তাদের মধ্যে কাজের সাথে একাত্মতার অনুভূতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় ।
ঘ) সম্মোহনী নেতৃত্ব (Charismatic leadership ) :
এরূপ নেতৃত্ব ধারণায় নেতা এমন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী থাকে যা অধস্তনদের মাঝে তার প্রতি বিশেষ এক ধরনের আস্থা ও প্রত্যাশার জন্ম দেয় । এরূপ নেতা প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে অনুসারীদের মাঝে এমন প্রভাব সৃষ্টি করে যাতে তারা তাঁকে তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এবং তার নির্দেশ পালনকে জীবনের মিশন বা ধ্যান-জ্ঞান মনে করে থাকে । সাধারণভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা এ ধরনের নেতৃত্ব লক্ষ্য করলেও ব্যবসা- বাণিজ্যসহ সমাজের সকল পর্যায়েই এ ধরনের নেতৃত্ব সৃষ্টি হতে পারে ।
উপসংহারে বলা যায়, নেতৃত্ব তত্ত্ব ও নেতৃত্বের ধরন সবই নেতৃত্বদানের সাথে সম্পর্কীত। আর এই নেতৃত্বদান কার্য বিশেষভাবেই প্রেষণার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কার্যক্ষেত্রে জটিলতা বৃদ্ধি, কর্মকেন্দ্রে যোগ্য ও বিশেষজ্ঞ কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি, জনশক্তির সচেতনতা বৃদ্ধি-সবমিলিয়ে জনশক্তিকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করে কাজ আদায় ছাড়া বর্তমানে কোনো বিকল্প নেই। তাই যোগ্য নেতৃত্বের সাথে প্রেষণাদান যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও দেখুনঃ