স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, গুরুত্ব বা সুবিধা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ব্যবস্থাপনা নীতিমালা” বিষয়ের ” পরিকল্পনা” বিষয়ক পাঠের অংশ। স্ট্র্যাটীজিক পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা । দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকে তবে কখনই তা অর্জন করা সম্ভব নয় । ‘যখন যেমন তখন তেমন’- এ নীতিতে আজকে একটা ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা যায় না। অথচ বিশ্বজোড়া বাজারে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়তই মারাত্মক প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করে চলতে হয় । রাজায় রাজায় যুদ্ধের দিন অনেক আগেই শেষ হয়েছে বলা যায় কিন্তু শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধ এতটাই প্রবল ও সার্বক্ষণিক যে একটুও অসচেতন হওয়ার সুযোগ নেই ।
Table of Contents
স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, গুরুত্ব বা সুবিধা
Alfred D. Chandler (চান্দলার) এর প্রতি আলোকপাত করেই বলেছেন, “Business is like war in one respect. If its grand strategy is correct, any number of tactical errors can be made and yet the enterprise proves successful.” ” অর্থাৎ একদিক বিবেচনায় ব্যবসায় যুদ্ধের মতো । যদি এর মূল স্ট্র্যাটিজি বা রণকৌশল ঠিক থাকে তবে কার্যক্ষেত্রে কৌশলগত কিছু ত্রুটি হলেও প্রতিষ্ঠান সাফল্য লাভ করতে পারে ।
বর্তমানকালে যেকোনো প্রতিযোগী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক পরিকল্পনার বিভিন্ন স্তর বিবেচনা করলেই স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করা যায়। Stoner ও অন্যরা সাংগঠনিক পরিকল্পনার স্তরকে যেভাবে রেখাচিত্রের সাহায্যে তুলে ধরেছেন তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
নিম্নে স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্য/গুরুত্ব বা এর সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. কার্যসম্বন্ধীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা (Assistance in preparing operational plan):
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণের পর তা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি করণীয় কাজ বা পদক্ষেপসমূহ যদি নির্দিষ্ট করা হয় এবং কোন্ কাজ কখন কীভাবে শুরু করা হবে তারও যদি দিক নির্দেশনা থাকে তবে মধ্যম ও নিচের পর্যায়ের নির্বাহীদের কার্যসম্বন্ধীয় পরিকল্পনা গ্রহণ খুবই সহজ হয়। তাই স্ট্যাটাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন কর্ম বিষয়ক পরিকল্পনা গ্রহণকে কার্যকর সহায়তা প্রদান করে ।
২. সামগ্রিক কাজে সংহতি প্রতিষ্ঠা (Integration in total work):
স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনার অগ্রাধিকার বিবেচনায় কাজের ক্রমনির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটা কাজে কী ধরনের ও কী পরিমাণের উপকরণাদির প্রয়োজন হবে তাও নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া এরূপ পরিকল্পনা লক্ষ্য অর্জনে সাংগঠনিক সকল সুযোগ- সুবিধা ও দলবদ্ধ প্রচেষ্টাকে জোরদার করে তা কীভাবে কাজে লাগানো হবে তারও দিকনির্দেশ করে । তাই এর ফলে সামগ্রিক কাজে সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ (Overcoming indiscipline ) :
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিচের পর্যায়ের নির্বাহীদের হাতে ছেড়ে দিলে তা কখনই কার্যকর হতে পারে না । এরূপ লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ কী হতে পারে, প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তব্য সুযোগ-সুবিধা কী পাওয়া যাবে এবং তাকে কীভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগিয়ে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে উর্ধ্বতনগণের সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকা আবশ্যক । স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগুলো নির্দিষ্ট হওয়ায় কাজে কখনই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পাচ্ছে ।
৪. প্রতিযোগিতা মোকাবিলা (Facing competition) :
স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনাকে প্রতিযোগিতামূলক পরিকল্পনা নামেও অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায়-বাণিজ্যের জগতে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে মারাত্মক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় তার মোকাবিলার জন্যই এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণীত হয় । এ জন্য প্রতিযোগীদের অবস্থা ও তাদের সম্ভাব্য কর্মকৌশল কী হতে পারে তা বিশেষভাবে বিবেচনায় এনে স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনা প্রণীত হয় । ফলে প্রতিযোগিতা মোকাবিলা অনেক সহজ হয়ে থাকে।

৫. মূল্যায়ন ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা (Assistance to evaluation and control) :
স্ট্র্যাটাজিক পরিকল্পনায় কাজের ক্রমধারাই শুধুমাত্র নির্দিষ্ট করা হয় না প্রতিটা কাজে করণীয় কর্মকাণ্ড বা কর্মপদক্ষেপও নির্দিষ্ট করা হয় । এ ছাড়াও প্রতিটা পদক্ষেপের ফলাফল কী হতে পারে তাও ঠিক করা হয়। এ ছাড়া কোন্ কাজ কখন ও কতদিনে বাস্তবায়ন করা যাবে তাও এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করা হয় । যা কার্যমূল্যায়ন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করে ।
আরও দেখুনঃ