পোর্টারের শিল্পীয় বিশ্লেষণ এবং সাধারণ প্রতিযোগিতামূলক কৌশলসমূহ নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ব্যবস্থাপনা নীতিমালা” বিষয়ের ” পরিকল্পনা” বিষয়ক পাঠের অংশ। স্ট্রাটিজি নির্ধারণে অধ্যাপক মাইকেল পোর্টার (Professor Michael Porter) কোনো শিল্পখাতের আকর্ষণীয়তা এবং উক্ত খাতের মধ্যে কোনো একটা নির্দিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থা বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক বলে মত দিয়েছেন । একেই শিল্পীয় বিশ্লেষণ বলে । শিল্প সম্পর্কিত স্ট্রাটিজি নির্ধারণে এরূপ বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে । শিল্পের বিশ্লেষণে যেয়ে তিনি নিম্নোক্ত পাঁচটি শক্তি বা উপাদানকে চিহ্নিত করেছেন।
Table of Contents
পোর্টারের শিল্পীয় বিশ্লেষণ এবং সাধারণ প্রতিযোগিতামূলক কৌশলসমূহ
১. কোম্পানিসমূহের মধ্যকার প্রতিযোগিতা;
২. বাজারে নতুন কোম্পানি প্রবেশের ভীতি;
৩.বিকল্প পণ্য বা সেবা ব্যবহারের সম্ভাবনা;
৪. সেবা সরবরাহকারীদের দরকষাকষির ক্ষমতা ও
৫. ক্রেতা বা গ্রাহকদের দরকষাকষির ক্ষমতা ।
এই স্ট্রাটিজিকে জেনেরিক বলার অর্থ হলো এগুলো বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়েই ব্যবহারযোগ্য। এ ধরনের স্ট্রাটিজি কোনো সংগঠনে এক সাথে একাধিকও ব্যবহার করা যায়। পোর্টার এক্ষেত্রে যে সকল প্রতিযোগিতামূলক স্ট্রাটিজির উল্লেখ করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১. ব্যয় নেতৃত্বমূলক স্ট্র্যাটিজি (Cost leadership strategy) :
প্রতিযোগীদের মোকাবিলায় একটা গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটিজি হলো নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য বা সেবার একক প্রতি ব্যয় যথাসাধ্য কম রাখার চেষ্টা করা । পণ্যের বা সেবার উৎপাদন ব্যয় যদি অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়ে কম রাখা সম্ভব হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের চেয়ে কমমূল্যে তা বাজারে বিক্রয় করা যায়।। এতে বাজারে চাহিদা বাড়ে, বিক্রয় বাড়ে এবং মুনাফার পরিমাণও সর্বোচ্চ ।
২. পৃথকীকরণ স্ট্র্যাটিজি (Differentiation strategy) :
এ ধরনের স্ট্র্যাটিজির মুখ্য বিষয় হলো পণ্য বা সেবার মান এমন হতে হবে যাতে তা প্রতিযোগীদের তুলনায় অধিক মানসম্মত হয় এবং ক্রেতাসাধারণের কাছে তা বিশেষ ইমেজ (ভাবমূর্তি) প্রতিষ্ঠা করতে পারে । মানসম্মত পণ্য বা সেবা ব্যবহারে আগ্রহী ক্রেতাসাধারণের কাছে এরূপ স্ট্র্যাটিজি বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। এরূপ ভাবমূর্তি একবার প্রতিষ্ঠিত হলে দীর্ঘমেয়াদে পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব ।
৩. কেন্দ্রীভূতকরণ স্ট্র্যাটিজি (Focus strategy) :
এ ধরনের স্ট্র্যাটিজি বাজার সম্পর্কিত । বিশেষ ধরনের ক্রেতাদের ওপর বা নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাজারের ওপর নিজের সম্পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার স্ট্র্যাটিজিকে কেন্দ্রীভূতকরণ স্ট্র্যাটিজি বলে। এক্ষেত্রে নিজেদের চিন্তা ও প্রচেষ্টাকে ব্যাপক-বিস্তৃত বাজারের ওপর নিবন্ধ না করে নির্দিষ্ট বাজারের ওপর নিবন্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট বাজারে নিজস্ব প্রভাব সৃষ্টির জন্য ব্যয় নেতৃত্বমূলক স্ট্র্যাটিজি বা পৃথকীকরণ স্ট্র্যাটিজি বা উভয়েরই সহায়তা নেয়া হয়ে থাকে । এতে ঐ বাজারের ক্রেতাসাধারণ উক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্যকেই একক পণ্য হিসেবে গ্রহণ করে । ফলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঐ বাজারে প্রবেশ খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। আমাদের দেশে একসময় মোটরসাইকেল বলতে মানুষ হোল্ডা মোটরসাইকেলকেই বুঝতো । লুব্রিকেন্ট অয়েলকে এক সময় এদেশে মবিল বলা হতো যা এরূপ স্ট্র্যাটিজির উদাহরণ ।
আরও দেখুনঃ