[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

লিকার্টের নেতৃত্বের চার পদ্ধতি বা তত্ত্ব 

আজকের আলোচনার বিযয় লিকার্টের নেতৃত্বের চার পদ্ধতি বা তত্ত্ব – যা নেতৃত্ব এর অর্ন্তভুক্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেনসিস লিকার্ট এবং তাঁর সহযোগীগণ ত্রিশ বছর যাবৎ গবেষণা চালিয়ে নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা কৌশল সম্পর্কে যে চারটি পদ্ধতির নির্দেশ করেছেন তাই লিকার্টের নেতৃত্বের চার পদ্ধতি বা তত্ত্ব নামে পরিচিতি । তিনি তাঁর গবেষণার মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের আচরণ বুঝতে কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি দেখেছেন, একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক তার অধস্তনদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় থাকেন এবং যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি সবাইকে একটা একক (Unit) এ পরিণত করেন।

লিকার্টের নেতৃত্বের চার পদ্ধতি বা তত্ত্ব

 

লিকার্টের নেতৃত্বের চার পদ্ধতি বা তত্ত্ব 

 

দলের সকল সদস্য (নেতা বা ব্যবস্থাপকসহ) পরস্পর সহযোগী মনোভাব প্রদর্শন করে এবং তারা একে অন্যের প্রয়োজন, মূল্যবোধ, খ্যাতি, লক্ষ্য ও প্রত্যাশাকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়; যা মানব প্রেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । তিনি এই ধারণাকে একটা দল পরিচালনায় সবচেয়ে সফল বলে মন্তব্য করেছেন । লিকার্ট তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির উপস্থাপনা ও নেতৃত্ব কৌশল উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্বের চারটি পদ্ধতির নির্দেশ করেছেন । নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

১ম পদ্ধতি (System-1):

শোষণমূলক প্রভুত্বব্যঞ্জক নেতৃত্ব (Exploitive authoritative leadership):

এরূপ পদ্ধতি বা কৌশলসম্পন্ন নেতৃত্ব সর্বোচ্চ মাত্রার স্বৈরাচারী হয়ে থাকে। অধস্তনদেরকে খুবই কম বিশ্বাস করে । মনে করে, তারা অসৎ, অযোগ্য ও ফাঁকিবাজ । এরূপ ব্যবস্থাপক ক্বচিৎ অধস্তনদের পুরস্কৃত করলেও সাধারণভাবে কর্মীদের ভয় ও শাস্তির মাধ্যমে নেতিবাচক উপায়ে কাজে উৎসাহী করতে চেষ্টা করে। তারা সর্বদায় নিম্নমুখী যোগাযোগ করে বা নির্দেশ দেয় কিন্তু অধস্তনদের পক্ষ থেকে কিছু বলার বা যোগাযোগের কোনই সুযোগ দেয় না । এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সকল ক্ষমতা ব্যবস্থাপক উপরিস্তরে বা নিজের কাছে সংরক্ষণ করে ।

২য় পদ্ধতি (System-2);

দয়ালু প্রভুত্বব্যঞ্জক নেতৃত্ব (Benevolents authoritative leadership):

এরূপ নেতৃত্ব কৌশলসম্পন্ন নেতা অধস্তনদের প্রতি যেমনি আস্থাশীল ও বিশ্বাসী হতে চায় তেমনি নেতৃত্বের প্রতিও আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি করে তাদের উৎসাহিত করতে চেষ্টা করে । অধস্তনদের ভালো কাজে যেমনি পুরস্কৃত করে তেমনি অনেক ক্ষেত্রেই ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও শাস্তির মাধ্যমে নেতিবাচকভাবে উৎসাহ সৃষ্টির চেষ্টা চালায় ।

 

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এরূপ নেতৃত্ব উর্ধ্বমুখী যোগাযোগ বা ঊর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ বা কথা বলার সীমিত অনুমতি দেয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে কর্মীদের নিকট থেকে কিছুটা ধারণা বা মতামত সংগ্রহ করে। নিচের দিকে সীমিত পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কাউকে দিলেও নীতিগত ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধস্তনদের অংশগ্রহণকে অপছন্দ করে ।

৩য় পদ্ধতি (System-3) ;

পরামর্শমূলক ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্ব (Cunsultative management or leadership):

এ ধরনের নেতৃত্ব অধস্তনদের প্রতি পুরোপুরি আস্থাশীল না হলেও মোটামুটি আস্থাশীল বা বিশ্বাসী থাকে।  অনেকেই যোগ্য এবং পরামর্শ দেয়ার সামর্থ্য রাখে । তাই তাদের মতামতকে যতটা সম্ভব মূল্যায়ন করা উচিত এরূপ পদ্ধতিতে নেতা অধস্তনদের পুরষ্কৃত করে উৎসাহিত করার চেষ্টা করলেও কখনও কখনও নেতিবাচক প্রণোদনা; যেমন- শাস্তি দিয়ে বা ভয়-ভীতি দেখিয়েও কাজ আদায় করে ।

এক্ষেত্রে উর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী উভয় ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রিয়াশীল থাকে। সামগ্রিক নীতি-কৌশল এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ প্রতিষ্ঠানের উপরিস্তরে নেয়া হয় এবং কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিচের নির্বাহীদের প্রদত্ত হয় । যেই পর্যায়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক না কেন যতটা সম্ভব অধস্তনদের পরামর্শ গ্রহণ ও পরামর্শ করে কাজ করার ওপর এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে ।

৪র্থ পদ্ধতি (System-4):

অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্ব (Participative management or leadership):

এরূপ নেতৃত্ব অধস্তনদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল থাকে। ফলে তাদের মতামত ও চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দেয়া হয় ও গঠনমূলকভাবে তার ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারণ ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর অগ্রগতি মুল্যায়নে দলীয়ভাবে সকলের অংশগ্রহণ ও জড়িত থাকার বিষয়কে উৎসাহিত করা হয় এবং সে অনুযায়ী অধস্তনদের মূল্যায়ন ও আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে ।

 

লিকার্টের নেতৃত্বের চার পদ্ধতি বা তত্ত্ব 

 

উর্ধ্বমুখী, নিম্নমুখী, সমান্তরাল সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা এক্ষেত্রে উৎসাহিত হয় এবং যতটা সম্ভব প্রতিষ্ঠানের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণেই অধস্তনদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয় । এরূপ নেতৃত্ব সকল জনশক্তিকে একটা দল হিসেবে বিবেচনা করে এবং ব্যবস্থাপনার সবস্তরে দলীয় প্রচেষ্টা জোরদারের চেষ্টা চালায় ।

লিকার্ট মনে করেছেন, যে ব্যবস্থাপনা বা নেতৃত্ব ৪র্থ পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা নেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জনে সক্ষম। এরূপ নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা অর্জন এবং উৎপাদনশীলতার বিচারে অধিক মাত্রায় সফলতা অর্জন করতে পারে। তিনি মনে করেছেন, এরূপ নেতৃত্বের সফলতা অংশীদারিত্বের মাত্রা, অধস্তনদের সহায়তা এবং তা ধরে রাখতে পারার ওপর নির্ভর করে ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment