ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্টে শিশুশ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান 

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়  শিশুশ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধা। এই পাঠটি “ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্টে” বিষয়ের “শ্রম ও শিল্প আইন” বিভাগের একটি পাঠ।

 

 শিশুশ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান

 

শিশুশ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান 

 

১৯৬৫ সালের কারখানা আইনের বিধান মতে ১৬ বছরের কম বয়স্ক ব্যক্তিকে শিশু বলা হয়। [-২ (গ) ধারা) ১৬ বছর অতিক্রম করেছে কিন্তু ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এরূপ শ্রমিকরা দৈহিক সক্ষমতা সার্টিফিকেট থাকলে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে এবং সার্টিফিকেট না থাকলে শিশু শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হবে।

শিশুশ্রমিক নিয়োগের শর্তাবলি ঃ এজন্য শিশুশ্রমিক নিম্নবর্ণিত শর্তে কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পারে-

 

১। শারীরিক যোগ্যতা ও প্রতীক চিহ্ন :

সার্টিফিকেটদানকারী সার্জন কর্তৃক শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সার্জনের মতে যদি তার বয়স ১৪ বছর পূর্ণ হয়ে থাকে এবং আনুমানিক হারে শারীরিক যোগ্যতা থাকে, তবে তিনি তাকে সক্ষমতা সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। এই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ করা যাবে। তবে শ্রমিকটিকে একটি প্রতীক চিহ্ন বহন করতে হবে এবং ম্যানেজারের হেফাজতে সেই সার্টিফিকেট থাকবে।

 

২। নিষিদ্ধ কার্য :

নিম্নবর্ণিত কার্যে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না-

 

(ক) চলমান যন্ত্র ঃ

কোন যন্ত্রের কোন অংশ চলমান থাকা অবস্থায় কোন শিশুশ্রমিককে উক্ত অংশে তেল লাগানো পরিষ্কার করা বা বিন্যস্ত করার কাজ করতে দেয়া যাবে না। [ ২৪ (২) ধারা]

 

(খ) তুলাধুনা ঃ

তুলাধুনা যন্ত্রের যে অংশে তুলা ধুনা হয় এবং যে অংশে তুলা বের হয়, এর মধ্যবর্তী অংশে ছাদ পর্যন্ত দেয়াল না থাকলে কোন শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না। [২৯ ধারা]

 

(গ) বিপজ্জনক কাজ ঃ

কোন বিপজ্জনক কাজে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না।

 

৩। কার্যকাল ঃ

শিশুশ্রমিকের কার্যকাল সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিধান রয়েছে।

(ক) কোন শিশুশ্রমিককে একাধিক ৫ ঘন্টার অতিরিক্ত কাজ করানো যবে না এবং সন্ধ্যা ৭টা হতে সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাকে নিয়োগ করা যাবে না।

(খ) শিফটের ব্যবস্থা থাকলে একজন শিশুকে শুধু একটি শিফটে কাজ করাতে হবে এবং প্রধান পরিদর্শকের অনুমতি ব্যতিরেকে ৩০ দিনের মধ্যে একাধিকবার তার শিটি বদলানো যাবে না। [৭০(৩) ধারা]

(গ) সাপ্তাহিক ছুটির ক্ষেত্রে ৫১ ধারার বিধান প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ছুটি ভোগ করতে পারবে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যে ব্যতিক্রম আছে তা শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। (৭০ (৪) ধারা]

(ঘ) ৭১(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, যে সকল কারখানায় শিশুশ্রমিক রয়েছে তাদের কাজের সময়ের বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শিতথাকবে এবং তাদের কাজের সঠিক সময় এতে উল্লেখ থাকবে।

 

৪। রেজিস্টার ঃ

কারখানায় নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের জন্য একটি রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরিদর্শনের সময় পরিদর্শককে তা দেখাতে হবে।
এতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে-

(ক) কারখানায় নিযুক্ত শিশুর নাম ও জন্ম তারিখ

(খ) তার কাজের প্রকৃতি

গ)সে কোন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত

(ঘ) সে কোন শিফটে অন্তর্ভুক্ত

(ঙ) সার্টিফিকেট নম্বর ও তা নবায়ন করার তারিখ

(চ) অন্যান্য তথ্য যা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়’।

 

পরিশেষে এই আইনের ৭২(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, শিশুশ্রমিকদের রেজিস্টারের ফরম, তা সংরক্ষণের পদ্ধতি এবং সংরক্ষণের মেয়াদ নির্ধারণ করে সরকার বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারেন ।

(ড) ছুটি ও অবকাশ (Leave and Holidays) :

 

১। মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি :

৭৮ ধারায় বিধান রয়েছে যে, কোন শ্রমিক বিরতিহীনভাবে এক বছর কাজ করলে পরবর্তী এক বছরে প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকেরা প্রতি ২২ দিনে ১দিন এবং শিশুশ্রমিকেরা প্রতি ১৫ দিনে ১ দিন মজুরিসহ ছুটি ভোগ করবে। বিরতিহীন বলতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করাকে বুঝায় না। নিম্নোক্ত ছুটি ভোগ করলেও এই উদ্দেশ্যে বিরতিহীন বলে গণ্য করা হবে :

(ক) সাধারণ ছুটি বা অন্য কোন বন্ধ;

(খ) মজুরিসহ মঞ্জুরিকৃত অন্য কোন ছুটি;

(গ) অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে মজুরিসহ বা বিনা মজুরিতে মঞ্জুরিকৃত ছুটি;

(ঘ) মহিলা শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের অনধিক সন্তান প্রসব ছুটি;

(ঙ) মালিক কারখানা লে অফ ঘোষণা করলে;

(চ) বে-আইনি নয় এমন কোন ধর্মঘট বা তালাবন্ধ থাকাকালীন সময়।

 

২। উৎসব ছুটি ঃ

৭৯ ধারার বিধান মতে, প্রত্যেক শ্রমিককে বছরে অন্তত ১০ দিনের মজুরিসহ উৎসব ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। তবে উৎসব উপলক্ষে অরকাশের সময় বা প্রয়োজনবোধে যে কোন শ্রমিককে কাজ করতে হবে। কিন্তু এর বিনিময়ে তাকে পূর্ণ বেতনসহ ক্ষতিপূরণমূলক ২২ দিনের ছুটি এবং ১ দিনের বিকল্প ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

৩। নৈমিত্তিক ওঃ

অসুস্থতার ছুটি ৪ ৮০ ধারায় বর্ণিত রয়েছে যে, প্রত্যেক শ্রমিক বছরে পূর্ণ বেতনসহ ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি এবং গড় অর্ধ বেতনসহ ১৪ দিনের অসুস্থতার ছুটি ভোগ করতে পারবে। এই ছুটি সংশ্লিষ্ট বছরে ভোগ না করলে তা জমা করে পরবর্তী বছরে ভোগ করা যাবে না।

 

৪। ছুটিকালীন বেতন ঃ

কারখানা আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী একজন শ্রমিক ছুটিকালীন সময়ের জন্য নিম্নলিখিতভাবে তার সমান হারে তবে

(ক) পূর্ণ মজুরিসহ ছুটির ক্ষেত্রে, প্রতিদিনের কাজের জন্য যে মজুরি ও মহার্ঘ ভাতা পায় অতিরিক্ত সময়ের মজুরি বা বোনাস পেয়ে থাকলে তা উক্ত হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

(খ) গড় অর্ধ মজুরিসহ ছুটির ক্ষেত্রে উপরিউক্ত নিয়ম মোতাবেক মজুরি নির্ণয় করা হবে।

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৫। অগ্রিম বেতন ঃ

৮২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিককে অন্যূন ৪ দিনের ছুটি এবং শিশুশ্রমিককেঅন্যূন ৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর হয়ে থাকলে, ৭৮ ধারা অনুসারে উক্ত ছুটি শুরু হবার পূর্বেই তাকে যত দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে তত দিনের বেতন অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে।

 

৬। কারখানাকে অব্যাহতি প্রদান ঃ

সরকারের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোন কারখানায় শ্রমিকদের জন্য প্রদত্ত ছুটির সুযোগ-সুবিধা এই পরিচ্ছেদে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধার তুলনায় কম নয়, তাহলে সরকার লিখিত আদেশ জারী করে সেই কারখানাকে সমুদয় বা আংশিক অব্যাহতি দিতে পারেন।

 

শিশুশ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান 

 

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment