শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য বিধানসমূহ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য বিধানসমূহ।

 

 শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য বিধানসমূহ

 

শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য বিধানসমূহ

 

কারখানা আইনের ১২ হতে ২১ ধারায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারখানার মালিকদের কর্তব্য :

নিম্নে উপরোক্ত বিধানসমূহের বিস্তারিত আলোচনা করা হল ঃ

১। পরিচ্ছন্নতা ঃ

কারখানা আইনের ১২(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, নর্দমা, পায়খানা ও নোংরা স্থান হতে নির্গত দূষিত প ও বিশ্রী গন্ধ হতে কারখানাকে মুক্ত রাখতে হবে এবং এজন্য –

(ক) কারখানার মেঝে, সিঁড়ি, শ্রমিকদের বসার স্থান, বেঞ্চ, যাতায়াতের পথ প্রভৃতি ঝাড়ু দ্বারা বা অন্য কোন কার্যকর পন্থায় প্রতিদিন ধুলা ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে।

(খ)কারখানা গৃহের মেঝেগুলো সপ্তায় অন্তত একবার ধুয়ে প্রয়োজন হলে কীটনাশক ওষুধের সাহায্যে অথবা অন্য
কোন কার্যকর পন্থায় পরিষ্কার করতে হবে।

(গ) উৎপাদনকালে মেঝেতে পানি জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

(ঘ) কারখানার ভিতরকার সকল দেয়াল, সিলিং, ছাদ, যাতায়াতের পথ ইত্যাদি সম্বন্ধে নিম্নোক্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে :

(i) যে ক্ষেত্রে রং করা বা বার্নিশ করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি ৫ বছরে একবার করে আবার রং এবং বার্নিশ করতে হবে।

(ii) যে ক্ষেত্রে রং ও বার্নিশ করা যায় না, এমন জায়গাগুলোতে প্রতি ১৪ মাসে কমপক্ষে একবার পরিষ্কার
করতে হবে।

২। আবর্জনা ও তরল ময়লা অপসারণ :

কারখানা আইনের ১৩(১) ধারা অনুসারে, উৎপাদনকালে যে সক কারখানায় প্রস্তুত প্রক্রিয়াজাত আবর্জনা ও তরল ময়লা জমে উঠে তা কারখানা হতে অপসারণের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ১৩(২) ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, আইনের ১ উপধারায় বর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার নিয়ম প্রণয়ন বা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণের পন্থা নির্দেশ করতে পারেন।

 

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

(ক) পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন উপযোগী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং

(খ) শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপযুক্ত তাপমাত্রার ব্যবস্থা; এজন্য

(i) কারখানা গৃহের ছাদ ও দেয়াল এমন উপকরণ দ্বারা নির্মাণ করতে হবে যেন, সকল সময় সেখানে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে;

(ii) যেখানে বিশেষ ধরনের কার্য প্রক্রিয়ার কারণে তাপমাত্রা অধিক বৃদ্ধি পায়, সেখানে এমন কার্যকর ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন সহজেই ঘর হতে গরম বাতাস নির্গত হতে পারে এবং স্বাস্থ্যরক্ষায় উপযোগী তাপমাত্রা বিরাজ করে ।

(iii) আইনের ১৪(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, কারখানার নির্দিষ্ট স্থানে তাপমান যন্ত্র বাধ্যতামূলকভাবে সংস্থাপন
করতে হবে।

৪। ধুলাবালি ও ধোঁয়া :

কারখানা আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন কারখানায় বিশেষ ধরনের কার্যপ্রকৃতির কারণে যদি, ধুলা-ময়লা জমে বা ধোঁয়া বের হওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, এতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানি হতে পারে তবে উক্ত ধুলা ও ধোয়ার বিপক্ষে সুষ্ঠু প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫। কৃত্রিম আর্দ্রকরণ ঃ

কারখানা আইনের ১৬(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, যে সকল কারখানায় কৃত্রিম উপায়ে বায়ুর আর্দ্রতার সৃষ্টি করা হয়, সেক্ষেত্রে সরকার নিম্নোক্ত বিধিমালা প্রণয়ন করতে পারেন-

(ক) আর্দ্রতার মান নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধিমালা;
(খ) কৃত্রিম আর্দ্রতা বৃদ্ধির মাত্রা হ্রাসের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া নির্ধারণ সংক্রান্ত নিয়মাবলি;
(গ) সৃষ্ট আর্দ্রতা পরিমাপ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা;
(ঘ) শ্রমিকদের কাজের ঘরসমূহে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ও বাতাস ঠাণ্ডা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত বিধিমালা ।

৬। অতিরিক্ত ভিড় ঃ

কারখানা আইনের ১৭(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানির কারণ হয় কোন কারখানাতে এমন পরিমাণ শ্রমিকদের ভিড় থাকতে পারবে না। কারখানা আইনের ১৭(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, কারখানা গৃহে নিযুক্ত শ্রমিকের জন্য অবশ্যই নিম্নোক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে ঃ

(ক) কারখানা আইন, ১৯৬৫ গৃহীত তারিখে বিদ্যমান কোন করখানায় প্রত্যেক শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে ৩৫০ বর্গফুট স্থান থাকতে হবে।
(খ)  অত্র আইন বলবৎ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠিত কারখানায় প্রতি শ্রমিকের জন্য কমপক্ষে ৫০০ বর্গফুট স্থান থাকতে হবে

৭। আলোর ব্যবস্থা :

কারখানা আইনের ১৮(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, কারখানার প্রতিটি অংশে যেখানে শ্রমিকরা কাজ করে বা চলাচল করে সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বা উভয় ধরনের পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হে আইনের ১৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, কারখানার প্রতিটি কাজের ঘরে ১৪(৩) ধারার বিধান অনুযায়ী ব্যবহৃত জানালার কাঁচ বা ছাদ সংলগ্ন কাচের কক্ষসমূহ ভিতর ও বাহির উভয় দিক হতে পরিষ্কার রাখতে হবে।

৮। খাবার পানি ঃ

কারখানা আইনের ১৯(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক কারখানায় শ্রমিকদের ব্যবহারের জন সুবিধাজনক স্থানে সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। ১৯(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, যে স্থানে খাবার পানি রাখা হবে সে স্থানে অধিকাংশ শ্রমিকের বোধগম্য ভাষায় সহজে বুঝা যায় এমনভাবে “খাবার পানি” কথাটি লিখে রাখতে হবে এবং প্রধান পরিদর্শকের লিখিত অনুমতি ভিন্ন উক্ত খাবার পানির স্থানের ২০ ফুটের মধ্যে কোন ধৌতাগার, পায়খানা বা প্রস্রাবখানা থাকতে পারবে না।

৯। পায়খানা ও প্রস্রাবখানা ঃ

কারখানা আইনের ২০(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক কারখানায় –

(ক) কর্মরত শ্রমিকরা সহজে ব্যবহার করতে পারে এমন সুবিধাজনক স্থানে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পায়খানা ও প্রস্রাবখানার ব্যবস্থা রাখতে হবে;

(খ) কর্মরত পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের জন্য পৃথক পায়খানা ও প্রস্রাবখানার ব্যবস্থা থাকতে হবে;

(গ) পায়খানা ও প্রস্রাবখানায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং প্রধান পরিদর্শকের লিখিত রেহাইমূলক অনুমোদন ব্যতীত এরূপ পায়খানা ও প্রস্রাবখানা শ্রমিকদের কাজের ঘরের সংলগ্ন হতে পারবে না;

(ঘ) উক্ত পায়খানা ও প্রস্রাবখানাসমূহ যথোপযুক্তভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং জীবানুনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে;

(ঙ) উক্ত পায়খানা ও প্রস্রাবখানাসমূহের ভিতরের দেয়াল ও মেঝের উপরে তিন ফুট পর্যন্ত পাকা ও মসৃণ গাঁথুনিযুক্ত হতে হবে।

(১০) থুকদানি বা পিকদানি ঃ

কারখানা আইনের ২১(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, সকল কারখানায় সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পিকদানির ব্যবস্থা এবং তা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকার ইচ্ছা করলে উক্ত পিকদানির সংখ্যা, ধরন ও তা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে বিশেষ নিয়মাবলি প্রণয়ন করতে পারেন। ২১ (৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন শ্রমিক রক্ষিত পিকদানির বাইরে থুথু ফেলবে না এ মর্মে নির্দেশ ও তা লংঘনের শাস্তি সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি কারখানার ভিতরে ও উপযুক্ত স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে।

শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য বিধানসমূহ

 

আরও পড়ূনঃ

সংগঠন এর ভুমিকা

 

Leave a Comment