আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইন। এই পাঠটি “ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্টে” বিষয়ের “শ্রম ও শিল্প আইন” বিভাগের একটি পাঠ।
Table of Contents
শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইন
প্রতিনিয়ত নানা প্রকার বিপদের স্মৃতি নিয়েই মানুষকে পথ চলতে হয়। শ্রমিকদের জীবনও এর ব্যতিক্রম নয় এদের ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রযোজ্য। ক্ষতিপূরণ আইনে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পদ্ধতি খুব সহজ এবং স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত প্রতিবার সম্ভস। ১৯২৩ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে এই আইনটি প্রণীত হয় এবং সময়ে সময়ে এর কিছু পরিবর করা হলেও মূল কাঠামো এখনো অপরিবর্তন রয়েছে। কলকারখানা বা কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কার্য নিয়োজিত থাকা অবস্থ কোন মূৰ্ছটিনায় আহত হয়ে আংশিকভাবে যা সম্পূর্ণভাবে কর্মক্ষমতা হারালে কিংবা মারা গেলে অথবা পেশাগত রোগের কারণে সেই শ্রমিককে যা তার উপর নির্ভশীল ব্যক্তিরা মালিকপক্ষের নিকট হাতে নির্দিষ্ট হারে ক্ষতিপূরণ পাবার অধিক তবে শ্রমিকের অবহেলাজনিত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে মালিকপক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে না।
(ক) শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইনে ব্যবহৃত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা (Some important definition used in workmens compensation) ১। নির্ভরশীল যা পোষ্য ৪ শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইনের ২(১-৭) ধারার বিধান অনুযায়ী পোষ্য বলতে মৃত শ্রমিকের
নিম্নবর্ণিত যে কোন আত্মীয়স্বজনকে বুঝাবে-
(i) বিধবা স্ত্রী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র, অবিবাহিত কন্যা বৃদ্ধ মাতা এবং
(ii) শ্রমিকের মৃত্যুকালীন সময়ে তার রোজগারের উপর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে থাকলে বিধব বিধবা মাতা ছাড়াও পিতা, অপ্রাপ্ত বয়স্কা বা বিধবা কন্যা, নাবালক ভাই, অবিবাহিতা বা বিধবা অগ্নি, বিধব পুত্রবধূ, মৃত পুত্রের নাবালক সন্তান মাতা-পিতা কেউই জীবিত না থাকলে মৃত কন্যার নাবালক সন্তান এবং পিতামাতা জীবিত না থাকলে মৃত শ্রমিকের দাদা বা দাদী।
২। মালিক বা নিয়োগকারী :
আইনের ২(১-৫) ধারার বর্ণনা অনুযায়ী মালিক বা নিয়োগকর্তা বলতে সমিতিবন্ধ হোক বা না হোক মালিক হিসেবে রয়েছেন এমন কোন ব্যক্তিবর্গ, কোন মালিকের ম্যানেজিং এজেন্ট, মৃত মালিকের আইনগত প্রতিনিধি অথবা যেই ব্যক্তির সাথে শ্রমিক চাকরি বা শিক্ষানবিসের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সেই ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির নিকট উচ্চ শ্রমিকদেরকে ধার বা ভাড়া হিসেবে কাজ করার জন্য পাঠালে সেই ব্যক্তি।
৩। ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধি ঃ
আইনের ২(১-চ) ধারায় বলা হয়েছে যে, ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধি বলতে মালিকের অধীনস্থ ব্যস্থাপক নয় অথচ মালিক কর্তৃক নিযুক্ত বা তার প্রতিনিধি হিসেবে কার্যরত কোন ব্যক্তিকে বুঝায় ।
৪। আংশিক দৈহিক অক্ষমতা ঃ
শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইনের ২(১-২) ধারায় বলা হয়েছে যে, আংশিক দৈহিক অক্ষমতা বলতে-
(i) সাময়িক ধরনের অক্ষমতার ক্ষেত্রে নিয়োগকারীর অধীনে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার ফলে শ্রমিকের মা উপার্জনের ক্ষমতা আংশিকভাবে হ্রাস পাওয়াকে বুঝায় ।
(ii) স্থায়ী ধরনের অক্ষমতার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সময় পর্যন্ত উপার্জনের যে ক্ষমতা শ্রমিকের ছিল তা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হওয়াকে বুঝায়।
৫। সম্পূর্ণ দৈহিক অক্ষমতা ও শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইনের ২(১-ট) ধারায় বলা হয়েছে যে, সম্পূর্ণ দৈহিক অক্ষম বলতে এমন ধরনের অক্ষমতাকে বুঝায় যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটার পূর্বপর্যন্ত শ্রমিক যে কাজটি করছিল তা করার ক্ষমত বিনষ্ট হয়; তা স্থায়ী বা অস্থায়ী যেই ধরনেরই হোক না কেন ।
৬। মজুরি ঃ
আইনের ২(১-১) ধারার বর্ণনা অনুযায়ী, মজুরি বলতে টাকার অংকে হিসেব করা যায় বেতনসহ সেই সকল সুযোগ-সুবিধার সমষ্টিকে বুঝায়; তবে যানবাহন ভাতা বা যানবাহন সুবিধার সমান মূল্য বা পেনশন প্রভিডেন্ট ফারে নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত অংশ বা কোন কাজ উপলক্ষে ব্যয় করার জন্য নিয়োগকর্তা কর্তৃক শ্রমিককে প্রদত্ত অর্থ অন্তর্ভুক্ত হবে না ।
৭। শ্রমিক :
বাংলাদেশে বহাল ১৯২৩ সালের শ্রমিক ক্ষতিপুরণ আইনের ২ (১-৫) ধারায় বলা হয়েছে যে, শ্রমিক বলতে সাময়িক চাকরি প্রাপ্ত বা মালিকের ব্যবসায়-বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে নিম্নোক্ত ব্যাক্তিদের বুঝাবে-
(i) ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ৩ ধারা অনুসারে রেলওয়েতে চাকরিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি যে রেলওয়ের কোন প্রশাসনিক জেলা বা মহকুমা অফিসে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত নয় ।
আরও পড়ূনঃ