[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণের উপায়

বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণের উপায় নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ব্যবস্থাপনা নীতিমালা” বিষয়ের ” ব্যবস্থাপনার পরিচিতি” বিষয়ক পাঠের অংশ। বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৃষ্ট অসুবিধা দীর্ঘদিনের অনুন্নত ও অকার্যকর কারবারি পরিবেশের ফল। তাই এরূপ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন বাস্তবধর্মী ও কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণের । নিম্নে এরূপ সমস্যা সমাধানে কতিপয় পন্থার সুপারিশ করা হলো :

বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণের উপায়

 

বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণের উপায় | ব্যবস্থাপনার পরিচিতি | ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

 

১. ব্যবস্থাপনাকে পেশার মর্যাদা দান (Professionalization of management) :

আমাদের দেশে ব্যবস্থাপনা পেশা হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ায় যেকোনো ব্যক্তি ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ লাভ করে। ফলে ব্যবস্থাপনা বিষয়টি একদিকে যেমন কম গুরুত্ব পায় তেমনিভাবে অন্যদিকে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পক্ষে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কার্য সম্পাদন সম্ভব হয় না । তাই এ সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থাপনা বিষয়কে অবশ্যই পেশার মর্যাদা দিতে হবে ।

২. প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি (Improved training facilities) :

আমাদের দেশের ব্যবস্থাপকগণ যাতে যুগের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের চিন্তা ও কর্মে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সাধন করতে পারেন এজন্য প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ও বাইরে ব্যাপক প্রশিক্ষণ সুবিধা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ ছাড়া যেখানে যতটুকু প্রশিক্ষণ সুবিধা রয়েছে তাও যাতে যথাযথভাবে কাজে লাগে সেজন্যও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ।

৩. সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি (Increase in manager’s facilities) :

আমাদের দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যারা পালন করেন তাদের সুযোগ-সুবিধার পরিমাণও অত্যন্ত সীমিত । তাই সুযোগ-সুবিধার অভাবে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয় না। এ ছাড়া মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ডাক্তার বা প্রকৌশলী হওয়ার যে আগ্রহ থাকে ব্যবস্থাপনা পেশায় আসার তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না । তাই ব্যবস্থাপকদের সুযোগ-সুবিধা যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে নজর দেয়া আবশ্যক।

 

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৪. আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ (Application of modern management approach) :

এ দেশে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এখনও প্রাচীনকালের চিন্তাধারা, মন-মানসিকতা ও আমলাতান্ত্রিক অব্যবস্থা বিদ্যমান । অথচ দেশের সর্বস্তরে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক ব্যবস্থাপনার চর্চা ও তার প্রয়োগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত

৫. আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার (Use of modern techniques) :

আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশলের ব্যবহারের ফলে ব্যবস্থাপনা কার্য অনেক সহজ ও কার্যক্ষম হয়ে ওঠে । ব্যবস্থাপকদের পক্ষে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন সহজ হয়। তাই আমাদের দেশে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশলের ব্যবহার এর উন্নয়নের স্বার্থেই অপরিহার্য ।

৬. সুষ্ঠু কর্ম নিয়মাবলি প্রবর্তন (Introduction of proper work-manuals) :

আমাদের দেশে কার্যক্ষেত্রে সুষ্ঠু কর্মপদ্ধতির স্থলে অকার্যকর ‘হাতুড়ে’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। জবাবদিহিতা এখানে সর্বক্ষেত্রেই অনুপস্থিত । ফলে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি এবং পরিচালনা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। তাই সর্বাগ্রে সকল পর্যায়ে সুষ্ঠু কর্ম নিয়মাবলি প্রবর্তন ও তার যথাযথ অনুসরণে নজর দেয়া প্রয়োজন ।

৭. মেধা ও দক্ষতার স্বীকৃতি প্রদান (Recognition of merits and efficiencies) :

মেধা ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া না হলে ব্যবস্থাপনা মেধাহীন ও অদক্ষ লোকদের নিগড়ে বন্দী হতে বাধ্য । আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মী নিয়োগ ও যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নয়ন ও পুরস্কার প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয় না । তাই ব্যবস্থাপনার মান উন্নীত করতে হলে অবশ্যই মেধা ও দক্ষতার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত ।

৮. অন্যায় হস্তক্ষেপ রোধ ( Prevention of undue intervention) :

ব্যবস্থাপনাকে বাধাহীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রদান না করলে সেখান থেকে ভালো ফল আশা করা যায় না । অথচ আমাদের দেশে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মালিকপক্ষ, সরকার, শ্রমিক সংঘ ও অন্যান্য প্রভাব সৃষ্টিকারী পক্ষ ব্যবস্থাপকদের কাজে প্রায়শই অযাচিত হস্তক্ষেপ করে । তাই ব্যবস্থাপনা হতে ভালো ফলাফল লাভ করতে হলে অবশ্যই সরকার, মালিক বা অন্যান্য প্রভাব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিবর্গের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা আবশ্যক ।

৯. গবেষণা (Research) :

প্রত্যহ পরিবর্তনশীল ব্যবসায় জগতে ব্যবস্থাপনার তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। এ লক্ষ্যে আমাদের দেশে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গবেষণার পরিমাণ বাড়ানো উচিত এবং এজন্য সরকারকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে এ বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় নজর দেয়া প্রয়োজন।

 

বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণের উপায় | ব্যবস্থাপনার পরিচিতি | ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

 

১০. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিধান (Ensuring political stability) :

রাজনৈতিক স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত । এ জন্য ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে রাজনৈতি হানাহানি ও যেকোনো অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও সুষ্ঠু উৎপাদনমুখী পরিবেশ সৃষ্টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব আরো করা উচিত । এজন্য সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই দায়িত্ব সচেতন হও আবশ্যক।

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পরিকল্পন এবং দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা আবশ্যক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সহকারে এগিে আসা ছাড়া এ ক্ষেত্রে উন্নয়নের কোনো আশা করা যায় না ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment