[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নীতি বা আদর্শ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা

ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নীতি বা আদর্শ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ব্যবস্থাপনা নীতিমালা” বিষয়ের ” ব্যবস্থাপনার পরিচিতি” বিষয়ক পাঠের অংশ। কোনো কাজে যদি পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠিত কতকগুলো মৌলিক সত্য বা পথনির্দেশনা নির্দিষ্ট থাকে তবে উক্ত কাজ সম্পাদনে অপ্রয়োজনীয় অনুমান করে পথ চলার প্রয়োজন পড়ে না । ব্যবস্থাপনা কার্য সম্পাদনেও এ বিষয়টি একটি অপরিহার্য সত্য ।

টেরি ও ফ্রাংকলিন বলেছেন, “The use of management principles is intended to simplify management work. Keys to what actions should be taken are suggested by this principle. .” অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা নীতির ব্যবহার ব্যবস্থাপনার কাজকে সহজ করবে বলে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করা যায় ।

প্রধান বিষয় হলো কী ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে হবে ব্যবস্থাপনার নীতি সে বিষয়ে পরামর্শ দেয় । ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এর নীতি অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :

ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নীতি বা আদর্শ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা

 

ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নীতি বা আদর্শ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা | ব্যবস্থাপনার পরিচিতি | ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

 

১. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা (Aid to taking decision) :

ভবিষ্যতে কোন্ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে বা কোন্ কাজ কীভাবে সম্পাদন করতে হবে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যবস্থাপনা নীতি সহায়তা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের পদোন্নতি প্রদানের ভিত্তি কী হবে বা কোন্ কোন্ নীতি বিবেচনা করে কর্মীদের পদোন্নতি প্রদান করা হবে এ সংক্রান্ত নীতিমালা যদি পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট থাকে তবে ঊর্ধ্বতনদের সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সহজ হয়।

২. দক্ষতার উন্নয়ন (Improvement of efficiency) :

প্রতিষ্ঠানে পূর্ব থেকেই প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা নির্দিষ্ট থাকলে তা ব্যবস্থাপনাকে তাদের কর্ম পরিচালনায় যেমনি সহায়তা করে তেমনি অধস্তনরাও পূর্ব থেকে এরূপ নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকায় সেভাবে চলার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে । এ ছাড়া একই ধরনের নীতিমালার আওতায় কাজ করতে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে দক্ষতার উন্নয়ন ঘটে ।

৩. কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি (Creating proper working environment) :

কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হলে প্রতিষ্ঠানে নীতি পালন অপরিহার্য। কারণ সুষ্ঠু নীতিমালা অনুসরণের অভাবে প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা, সন্দেহ, অবিশ্বাস, ধীরগতি, আলস্য, অবাধ্যতা ইত্যাদি বিরাজ করে । যে কারণে কাজের উত্তম পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে কার্যকর নীতিমালা অনুসরণ করতে হয় ।

৪. উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার (Proper utilization of resources) :

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উপায়-উপাদান সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতিমালা অনুসরণ করা অপরিহার্য। নীতির অভাবে সম্পদ অযথা ভাগাভাগি বা কাড়াকাড়ি হয়। তাই সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহারে ও অপচয় রোধে পূর্ব নির্ধারিত নীতির অনুসরণ কার্যকরী ফল দিয়ে থাকে ।

৫. প্রতিযোগিতায় সফলতা অর্জন (Achieving success in competition) :

বর্তমান তীব্র প্রতিযোগীশীল ব্যবসায় জগতে সফলতা অর্জন করতে হলে ব্যবস্থাপনাকে আবেগপ্রবণ, বিশৃঙ্খল ও অদূরদর্শী হলে চলে না। এ জন্য ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু চিন্তা-ভাবনার আলোকে যথাযথ উদ্যোগ ও কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হতে হয়। এক্ষেত্রে কার্যকর নীতিমালা অনুসরণ অনেকাংশে সহযোগিতা করে ।

 

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৬. কর্মভার লাঘব (Removing work-load) :

সুষ্ঠু নীতিমালার অনুসরণ ব্যবস্থাপকদের কর্মভার লাঘবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । নীতিমালা পূর্ব নির্দিষ্ট থাকায় পরিকল্পনা প্রণয়নে অনেক ঝামেলা হ্রাস পায়। কর্মীগণ একই নীতিমালার আওতায় সব সময় কাজ করার কারণে তাদের দায়িত্ব সহজেই বুঝে নিতে পারে এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে।

৭. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা (Establishing discipline) :

প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে নীতির অনুসরণ অপরিহার্য । দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এর ফলাফল সম্পর্কে সবারই উচ্চধারণা থাকে । ফলে নীতির অনুসরণে প্রত্যেকেই যত্নবান হয় । ফলে প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অনেক সহজ হয়ে থাকে ।

৮. শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা (Establishing labour management relationship) :

যে কোনো প্রতিষ্ঠানে উত্তম শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় নীতির অনুসরণ কার্যকর ফল দেয়। নীতি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকায় প্রত্যেকেই তা মান্য করে চলে। সুসংবদ্ধ নীতির আওতায় ব্যবস্থাপনার সকল কাজ চলার কারণে প্রত্যেকটা কাজই যথানিয়মে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয়। একতাই বল, ন্যায্য পারিশ্রমিক, ন্যায়পরায়ণতার নীতি ইত্যাদি অনুসরণের ফলে শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নত হয়।

৯. কর্মীদের উৎসাহ বৃদ্ধি (Increasing employee morale) :

প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ে সুষ্ঠু নীতিমালা নির্দিষ্ট থাকলে কর্মীরা উৎসাহ বোধ করে। এর অভাবে ঊর্ধ্বতনগণ ‘যখন যেমন তখন তেমন’-নীতির অনুসরণ করায় অধস্তনরা বিরক্ত হয় এবং উৎসাহ হারায়। চাকরির স্থায়িত্ব, ন্যায্য পারিশ্রমিক, উদ্যোগ ইত্যাদি নীতির অনুসরণ অবশ্যই কর্মীদের জন্য উৎসাহের কারণ হয় ।

 

ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নীতি বা আদর্শ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা | ব্যবস্থাপনার পরিচিতি | ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

 

১০. গবেষণার উন্নয়ন (Development of research) :

গবেষণার সার্বিক মান উন্নয়নের জন্য নীতিমালা অনুসরণ গুরুত্বপূর্ণ । গবেষণার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতিমালা অনুসরণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যথায় গবেষণাকর্ম থেকে প্রাপ্ত ফলাফল কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগে সমস্যা হয় ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment