[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান না কলা

ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান না কলা –  এই বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ব্যবস্থাপনা নীতিমালা” বিষয়ের ” ব্যবস্থাপনার পরিচিতি” বিষয়ক পাঠের অংশ। ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান না কলা- এ বিষয়ে প্রায়শই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে দেখা যায়। এর বড় কারণ হলো শিল্পবিপ্লবের পূর্বকাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ততোটা গুরুত্ব লাভ করেনি । কিন্তু বর্তমান বৃহদায়তন ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় পরিবেশে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ব্যবস্থাপকদের দক্ষতার উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত ।

ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান না কলা

 

ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান না কলা | ব্যবস্থাপনার পরিচিতি | ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

 

তাই বর্তমানকালে ব্যবস্থাপনা জ্ঞানের পৃথক শাখা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মধ্যদিয়ে এক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য (Fundamental truth) উদ্‌ঘাটন, তত্ত্ব, সূত্র, নীতি, নিয়ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও তা অনুসরণের চেষ্টা চলছে। তাই Terry ও Franklin বলেছেন, “It has been said that management is an art struggling to become a science. “সে কারণেই ব্যবস্থাপনাকে বিজ্ঞান ও কলা উভয়ই মনে করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞান ও কলা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিম্নে তুলে ধরা হলো : 

 

ব্যবস্থাপনা একটি বিজ্ঞান (Management is a Science) :

ব্যবস্থাপনাকে বিজ্ঞান বলতে গেলে প্রথমেই বিজ্ঞান কী তা জানা আবশ্যক। বিজ্ঞান হলো সংগঠিত জ্ঞান (Organized knowledge); যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যা সর্বজনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য । বিজ্ঞানের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি লক্ষণীয় :

১. বিজ্ঞান হলো সংগঠিত বা সুসংবদ্ধ জ্ঞান;

২. এরূপ জ্ঞান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিবেচনার মধ্য দিয়ে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত

৩. এ ধরনের জ্ঞান সর্বাবস্থায় সর্বজনীনভাবে প্রয়োগযোগ্য ।

বর্তমানকালে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিশারদদের চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে যে সকল তত্ত্ব, ধারণা, মূলনীতি ও পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটেছে তা সুসংবদ্ধ জ্ঞান হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে । ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে এখন কম্পিউটার প্রযুক্তি, অঙ্কের বিভিন্ন সূত্র ও পরিমাণগত পদ্ধতি (Quantitative technique) – ব্যবহার করা হচ্ছে । বিভিন্ন গবেষণার মধ্য দিয়ে নানান পদ্ধতি ও কৌশলের উদ্ভব ঘটেছে। অবশ্য এরূপ জ্ঞানকে বিভিন্ন সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে প্রয়োগ করতে হয় বিধায় অঙ্কশাস্ত্র, রসায়ন শাস্ত্র বা পদার্থবিদ্যার মতো এক্ষেত্রে ১০০ভাগ ফল নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই Terry ও Franklin একে প্রকৃত বিজ্ঞান না বলে সমাজবিজ্ঞান (Social science) হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।

 

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ব্যবস্থাপনা একটি কলা (Management is an Art) :

কলা হলো কোনো নির্দিষ্ট ফল অর্জনের প্রায়োগিক দক্ষতা (Practical skillness)। কোনো কাজ সম্পাদনের পদ্ধতি বা কৌশল কলা হিসেবে গণ্য। কোনো সুসংবদ্ধ জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টিও কলার সঙ্গে সম্পর্কিত । জ্ঞান যতক্ষণ অর্জন পর্যায়ে থাকে ততক্ষণ তা বিজ্ঞান আর এর প্রয়োগের বিষয় আসলেই তা কলার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । তাই বিজ্ঞান ও কলা ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত।

ব্যবস্থাপনা সমাজবিজ্ঞানের একটা শাখা। বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একজন ব্যবস্থাপক লক্ষ্যার্জনের জন্য দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটান । তাই Terry ও Franklin বলেছেন, “The art of management is a personal creative power plus skill in performance. “অর্থাৎ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কলা হলো ব্যক্তিগত উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সেই সঙ্গে কার্য সম্পাদনের দক্ষতা ।

এরূপ ক্ষমতা ও দক্ষতা যার যতোটা বেশি কার্যক্ষেত্রে তিনিই ততোটা সফল ব্যবস্থাপক । তবে এটা ঠিক যে, বর্তমানকালে বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কাজের জটিলতা এতোটাই বেড়েছে যে, এক্ষেত্রে প্রকৃত জ্ঞান না থাকলে কোনো ব্যবস্থাপকের পক্ষেই বেশি দূর এগুনো সম্ভব নয় । তাই বলা যায়, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রভাব বেশি। আর তা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অধিক ফলদায়ক হতে পারে।

 

ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান না কলা | ব্যবস্থাপনার পরিচিতি | ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

 

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, আবহমানকাল থেকে ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র কলা হিসেবে গণ্য হয়ে আসলেও বর্তমানকালে তা বিজ্ঞানের রূপ পরিগ্রহ করতে চলেছে। যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে ১০০ ভাগ ফল না হলেও উচ্চমাত্রায় ফল পাওয়া সম্ভব । তাই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ও এর প্রয়োগ দক্ষতা উভয়ই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । তাই বর্তমানে সবাই এ বিষয়ে একমত যে, ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান ও কলা উভয়ই ।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment