উৎপাদনশীলতা, ফলপ্রদতা ও দক্ষতা নিয়ে আজকের আলোচনা। এই পাঠটি “ব্যবস্থাপনা নীতিমালা” বিষয়ের ” ব্যবস্থাপনার পরিচিতি” বিষয়ক পাঠের অংশ। ব্যবস্থাপনা হলো উকরণাদির কার্যকর ব্যবহার করে লক্ষ্যার্জনের কৌশল । কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন কাজ; যেমন- পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নেতৃত্বদান ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাদি সম্পাদিত হয় । এই কার্যসমূহ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে উৎপানশীলতা, ফলপদতা ও দক্ষতা-এ তিনটা বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়ে থাকে । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
Table of Contents
উৎপাদনশীলতা, ফলপ্রদতা ও দক্ষতা
১.উৎপাদনশীলতা (Productivity) :
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য হলো উদ্বৃত্ত (Surplus) সৃষ্টি । এই উদ্বৃত্ত নির্ভর করে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে কী পরিমাণ আয় হয়েছে তার ওপর। যদি ১০০ টাকা ব্যয় করে আয় হয় ১১০ টাকা । তবে বলা হয় যে ১০ টাকা উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে । প্রতিষ্ঠানের মুনাফা এই উদ্বৃত্তের সাথে সম্পৃক্ত। উদ্বৃত্ত সৃষ্টির সামর্থ্যকেই সহজ অর্থে উৎপাদনশীলতা বলে । উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা ইনপুট ও আউপপুটের অনুপাতের ওপর নির্ভরশীল এক্ষেত্রে ইনপুটের হিসাব শ্রম, কাঁচামাল, মূলধন প্রতিটা বিষয়কে আলাদাভাবে নিয়ে বা সবগুলোকে একত্রে নিয়েও করা যায়।
এখন যদি কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ দান, উৎসাহদান ও উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রমিক পিছু ব্যয়ের তুলনায় প্রাপ্তি বা উৎপাদনের পরিমাণ বা হার বাড়তে থাকে তবে তা ব্যবস্থাপনা দক্ষতার প্রমাণ করে । প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চারটি উপায় হলো:
১. ইনপুটের পরিমাণ ঠিক রেখে আউটপুট বৃদ্ধি;
২. আউটপুট ঠিক রেখে ইনপুট কমানো;
৩. আউটপুট বৃদ্ধি ও ইনপুট হ্রাস ও
৪. ইনপুট বৃদ্ধির তুলনায় আউটপুটের অধিক বৃদ্ধি ।

২. ফলপ্রদতা (Effectiveness):
উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারাকেই ফলপ্রদতা বলে। ফলপ্রদতার বিষয়টি ফললাভের সাথে সম্পর্কিত । আমরা কোনো কাজ থেকে যে ফল ( Result) প্রত্যাশা করি তাকেই উদ্দেশ্য বলে । Wethrich ও Koontz বলেছেন, “উদ্দেশ্য হলো চূড়ান্ত ফলাফল যাকে ঘিরে কার্যক্রম আবর্তিত হয়। (Objectives are the ends toward which activity is aimed.) Weinrich ও Koontz ফলপ্রদতা সম্পর্কে বলেছেন, Effecitveness is the achivement of objectives.” অর্থাৎ উদ্দেশ্যের অর্জনই হলো ফলপ্রদতা ।
একটা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের ওপর প্রাপ্তি বিবেচনায় বিগত বছরের চেয়ে ৫০% বেশি মুনাফা বৃদ্ধির টার্গেট নির্ধারণ করেছে । এই টার্গেট বা উদ্দেশ্য সামনে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার পর দেখা গেল যে, ২৫% মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে । অর্থাৎ কার্যফলপ্রদতার হার ১০০% নয় ৫০% ।
৩. দক্ষতা (Efficiency):
সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে ও কমখরচে কাজ করতে পারাকে দক্ষতা বলে । কার্যফলপ্রদতা অর্জনে দক্ষতার সাথে সকল কাজ সম্পাদন গুরুত্বপূর্ণ। ভুলপথে তরী চালিয়ে যেমনি গন্তব্যে পৌছানো যায় না তেমনি কার্যসম্পাদনে অদক্ষতা ও অযোগ্যতাও কোনো ভালো ফল দিতে পারে না । তাই ন্যূনতম শক্তি, অর্থ, সামর্থ্য ও সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ সুফল অর্জনের বিষয়টি ব্যবস্থাপকীয় দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল ।
অইরিক ও কুঞ্জ বলেছেন, “Effectiveness is the achievement of objective. Efficiency is the achievement of the ends with the least amount of resources.” 59 অর্থাৎ উদ্দেশ্যের অর্জনই হলো ফলপ্রদতা এবং ন্যূনতম পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারাই হলো দক্ষতা ।
Peter F. Drucker (ড্রাকার) আরো স্পষ্ট করে বলেছেন, “The pertinent question is not how to do things right but how to find the right things to do and to concentrate resources and efforts on them”. অর্থাৎ কীভাবে সঠিক কাজটি করা যাবে ব্যবস্থাপকের দক্ষতা নির্ণয়ে তা মুখ্য বিষয় নয় বরং করণীয় সঠিক কাজ কোনটি তা নিরূপণ করে তা সম্পাদনের জন্য সম্পদ ও শক্তি কীভাবে সংগ্রহ ও সমন্বিত করা যাবে এটি তার সঙ্গে সম্পর্কিত ।
উপরোক্ত আলোচনা অনুসারে দক্ষতা হলো-
১. সঠিক কাজ কোনটি তা নিরূপণ করা;
২. সঠিক কাজটি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা এবং
৩. ন্যূনতম উপকরণ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল অর্জন করা ।
আরও দেখুনঃ